“এবার সিগারেট আপনাকে ব্যবসা শেখাবে!!”
আচ্ছা, তো কি শিখাবে? সেটা জানার জন্য একটু পেছনে যাওয়া দরকার।
২০০৫ সালের ১৫ই মার্চ “ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রন”-আইন করা হয়। যেখানে তামাকজাত দ্রব্যের বিপণন ও বিজ্ঞাপনের উপর কঠোরতা আরোপ করা হয়। you can’t advertise for these types of items thoroughly.
আবার দেখেন, সমগ্র বিশ্বসহ বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩১ মে তামাকমুক্ত দিবস উদযাপন করা হয়।
এমনকি সিগারেটের প্যাকেটে পর্যন্ত লেখা থাকে “ধূমপানের কারণে ক্যান্সার হয়”, “ধূমপান ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর” ইত্যাদি। এখন বলেন,আপনার নিয়মিত চলাচলের রাস্তায় বিগত ২/৪/৪ বছর আগে যতগুলো সিগারেটের দোকান ছিল- সেগুলোর মধ্যে কতগুলো এখন বন্ধ? কতগুলো দোকান সিগারেটের ব্যবসা করতে না পেরে ছেড়ে দিয়েছে ? কতগুলো ব্র্যান্ড মার্কেট থেকে তাদের সিগারেট উঠিয়ে নিয়েছে? আমার মনে হয় সংখ্যাটা ১ শতাংশ হবে কিনা সন্দেহ । বরং আমি এটা দেখেছি- কিছু দোকান দুই/চার বছরে সিগারেট আর চায়ের ব্যবসা করে মূলধন জমিয়ে সেখানে মুদির মালামাল তুলেছে।
আচ্ছা, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো যেখানে anti-tobacco movement নিয়ে উদ্যোগী , সেখানে এই পণ্যের ব্যবসা যুগের পর যুগ ধরে কিভাবে টিকে আছে সাড়া বিশ্বে?হয়তো উত্তরে অনেকে অনেক কারণ খুঁজে পাবেন। কিন্তু বিশ্বাস করেন,একটা ব্যবসা টিকে যাওয়ার যত কারণই থাকুক না কেন, ক্রেতা যদি না থাকে তাহলে সেই ব্যবসা বন্ধ হতে বাধ্য , সেই উদ্যোগ মার্কেটে ফ্লপ খেতে বাধ্য। সিগারেট এর ব্যবসা টিকে থাকার এটাই সবচেয়ে বড় কারণ। দুনিয়াতে আর দ্বিতীয় কোন পণ্য আছে বলে আমার মনে হয়না যেই পণ্যের গায়েই সেই পণ্যের ক্ষতিকর দিক লেখা থাকে , তারপরেও সেটা মানুষ টাকা দিয়ে কিনে ক্ষতির জন্যই ব্যবহার করে !!!!
লেখাটা বড় হলেও একটু কষ্ট করে পড়ার জন্য আবদার করছি। ম্যাজিকটা এখন থেকেই শুরু। youtube এ ১৯৫০ সালের পরের দিকের “kent” বিড়ির বিজ্ঞাপনগুলো দেইখেন। বা এরপরের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞাপনগুলোও দেইখেন। বিজ্ঞাপনে সিগারেট জিনিসটাকে খুব “মজার”, “স্নিগ্ধ”, “কোমল”- বিশেষণে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবার এর কিছু পরে (১৯৭০/১৯৮০ সালের) “marlboro”- বিড়ির বিজ্ঞাপনে এমন একজন cowboy কে দেখানো হয়েছে- যে খুব independent, adventure প্রিয় – don’t care type এর। সে যেই বিড়ি টানে সেটার নাম “marlboro”। মানে হল আমরা আমাদের subconscious মাইন্ডে নিজেকে যেমন সাহসী,একটু বেপরোয়া,একটু বেশি গতিশীল কল্পনা করি, সিগারেটের বিজ্ঞাপনের প্রধান চরিত্রকে সেইভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে।আর তার হাতে থাকে “marlboro” । মানুষ just নিজের কাল্পনিক reflection টা সেখানে দেখেছে। নিজের সম্পর্কে নিজের feelings টা বিজ্ঞাপনে খুঁজে পেয়েছে। ব্যাস, সেই পণ্য আজ অবধি চলছে।
কাজটা করা হয়েছে খুব সূক্ষ্মভাবে আর শক্তিশালীভাবে । কারণ এডভারটাইজার এটা ধরে ফেলেছিল যে একটা generation এর কাছে শুরুতে feelings আর emotion বিক্রি করতে পারলে বিড়ির বিক্রি এমনিতেই generation to generation চলবে। সেটারই প্রতিফলন আমরা দেখতেসি।আর তাইতো , সিগারেটের প্রচারে এত বিধি নিষেধ থাকা সত্ত্বেও , পণ্যেরই গায়ে পণ্যের দুর্নাম লেখা থাকা সত্ত্বেও মানুষ এটা টাকা দিয়ে কিনে । What a strength of perfect technical marketing !!
নিজের ব্যবসায় তাই আগে feelings বিক্রি করতে হবে, emotional marketing করতে হবে। নিজের ব্যবসার পণ্যের সাথে মিলে এরকম কনসেপ্ট দিয়ে মার্কেটিং করতে হবে। নিজের ব্যবসার পণ্য যদি হয় ক্যামেরা , মার্কেটিং করতে হবে এভাবে যে সেই ক্যামেরায় বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজির ছবি তুলে বহু বছর পর নিজের নাতি নাতনিকে সেই ছবি দেখিয়ে স্মৃতি হাতরিয়ে চোখের পানি ফেলা হচ্ছে (উদাহরণ দিলাম)। মানুষের emotion টা touch করতে হবে যেই জিনিসের সামান্য একটা কোন ভালো দিক নাই – সেটাকে “মজার”, “স্নিগ্ধ”, “কোমল” বলে যদি মার্কেটে যুগের পর যুগ চালানো যায় , তাহলে আমরা যারা product বা service based ব্যবসা করছি – আমাদের প্রত্যেকের পণ্যই কম হউক বেশি হউক – অন্তত সিগারেটের চাইতে তো উপকারি নাকি?? বিক্রি হবেই। শুধু দরকার যুগোপযোগী কিছু সিদ্ধান্ত।
বি.দ্র: আর্টিকেল পড়ে মার্কেটিং বুঝতে যেয়ে সিগারেট খাওয়ার চেষ্টা কইরেন না আবার !! আমি নিজে সিগারেট খাইনা এবং অন্যকে খেতে নিরুৎসাহিত করি।
ধন্যবাদ